কবি পরিচিতি
[বিসিএস লিখিত, অন্যান্য সরকারি চাকরির লিখিত ও এমসিকিউ পরীক্ষা, বিসিএস
প্রিলিমিনারী, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ]
[সৈয়দ আলাওল আনুমানিক ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদের
অন্তর্গত জোবরা গ্রামে, মতান্তরে ফরিদপুরের ফতেয়াবাদ পরগনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ফতেয়াবাদের
শাসনকর্তা মজলিশ কুতুবের অমাত্য। জলপথে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় আলাওল ও তাঁর পিতা পর্তুগিজ জলদস্যুদের দ্বারা
আক্রান্ত হন। যুদ্ধে পিতা নিহত হলে আলাওল পর্তুগিজ জলদস্যুদের হাতে পড়ে আরাকানে নীত হন। সেখানে তিনি আরাকানরাজ সাদ
উমাদারের দেহরক্ষী অশ্বারোহী সেনাদলে চাকরি লাভ করেন। রাজমন্ত্রী মাগন ঠাকুর তাঁর বিদ্যাবুদ্ধি ও প্রতিভার পরিচয়
পেয়ে তাঁকে পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। তিনি সপ্তদশ শতকের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত। তিনি আরবি, ফারসি, হিন্দি ও
সংস্কৃত ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন। এছাড়া তিনি রাগসংগীত, যোগ ও ভেষজশাস্ত্র, সুফিতত্ত্ব ও বৈষ্ণব সাধনা ইত্যাদি বিষয়ে
পারদর্শী ছিলেন। আলাওলের যেসব গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলো হল: পদ্মাবতী, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল, হপ্তপয়কর,
সেকান্দরনামা, তোহফা ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি কবি দৌলত কাজীর অসমাপ্ত কাব্য সতীময়না ও লোরচন্দ্রানীর শেষাংশ রচনা করেন।
আলাওলের কাব্য অনুবাদমূলক হলেও তা মৌলিকতার দাবিদার। আলাওল আনুমানিক ১৬৭৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন।]
কবি আবদুল হাকিম
[আনুমানিক ১৬২০ খ্রিষ্টাব্দে সন্দ্বীপের সুধারামপুর গ্রামে আবদুল হাকিম
জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান কবি আবদুল হাকিমের স্বদেশের ও স্বভাষার প্রতি ছিল অটুট ও অপরিসীম
প্রেম। সেই যুগে মাতৃভাষার প্রতি এমন গভীর ভালোবাসার নিদর্শন ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য
কালজয়ী আদর্শ। নূরনামা তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল: ইউসুফ জোলেখা, লালমতি,
সয়ফুলমুলুক, শিহাবুদ্দিননামা, নসীহত্মামা, কারবালা ও শহরনামা। তাঁর কবিতায় তাঁর অনুপম ব্যক্তিত্বের পরিচয় মেলে। তিনি ১৬৯০ সালে
মৃত্যুবরণ করেন।]
কবি-পরিচিতি: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
[কবি-পরিচিতি: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার কাছাকাছি
কাঁচড়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের জন্য তিনি বেশি লেখাপড়া করতে না পারলেও আপন সাধনা ও প্রতিভাবলে কবিতায় নতুন দিক
প্রবর্তন করেন। তাঁকে যুগসন্ধিকালের কবি বলা হয়। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত 'সংবাদ প্রভাকর' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক
ছিলেন। তাঁর কবিতায় অনুপ্রাস ও অলঙ্কারপ্রিয়তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি রঙ্গ ও ব্যঙ্গ কবিতা রচনায় দক্ষ ছিলেন। তাঁর
দেশপ্রেম এবং নীতিমূলক কবিতাগুলো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। হিত প্রভাকর ও বোধেন্দু বিকাশ তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৮৫৯
খ্রিষ্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন।]
[কবি-পরিচিতি: মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জানুয়ারি যশোর জেলার
সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলজীবনের শেষে তিনি কলকাতার হিন্দু
কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজে অধ্যয়নকালে ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি তাঁর তীব্র
অনুরাগ জন্মে। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হন। তখন তাঁর
নামের প্রথমে যোগ হয় 'মাইকেল'। পাশ্চাত্য জীবন যাপনের প্রতি প্রবল ইচ্ছা এবং
ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যসাধনায় তীব্র আবেগ তাঁকে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যরচনায়
উদ্বুদ্ধ করে। পরবর্তীকালে জীবনের বিচিত্র কষ্টকর অভিজ্ঞতায় তাঁর এই ভুল
ভেঙেছিল। বাংলা ভাষায় কাব্যরচনার মধ্য দিয়ে তাঁর কবিপ্রতিভার যথার্থ
সস্ফূর্তি ঘটে। তাঁর অমর কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ:
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য ও চতুর্দশপদী
কবিতাবলি। তাঁর নাটক: কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী; এবং প্রহসন: একেই কি
বলে সভ্যতা ও বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ এবং সনেট
প্রবর্তন করে তিনি বাংলা সাহিত্যে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। ১৮৭৩
খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে জুন কবি পরলোকগমন করেন।]
[কবি-পরিচিতি: কবি কায়কোবাদ ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ
থানার আগলা পূর্বপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম কাজেম আল কোরায়শী। এনট্রান্স পরীক্ষার পূর্বেই তাঁর
শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটে। সরকারের ডাক বিভাগে দীর্ঘকাল চাকরির পর ১৯১৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তাঁর কাব্যে
প্রকৃতিপ্রেম ও ঐতিহ্যপ্রীতি লক্ষণীয়। তিনি মহাশ্মশান কাব্য রচনা করে মহাকবির মর্যাদা লাভ করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন
গীতিকবি। অশ্রুমালা, অমিয় ধারা তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। মহাশ্মশান তাঁর রচিত মহাকাব্য। কবি কায়কোবাদ ১৯৫১ সালের
২১শে জুলাই পরলোকগমন করেন।]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
[কবি-পরিচিতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে (২৫শে বৈশাখ,
১২৬৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালে
রবীন্দ্রনাথকে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমী প্রভৃতি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার জন্য পাঠানো হলেও তিনি বেশিদিন স্কুলের শাসনে
থাকতে পারেননি। সতেরো বছর বয়সে তাঁকে পাঠানো হয় ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য।
কিন্তু দেড় বছর পর তিনি ব্যারিস্টারি পড়া অসম্পূর্ণ রেখে দেশে ফিরে আসেন।
১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের একক সাধনায় বাংলা ভাষা
সকল শাখায় সমৃদ্ধ হয়ে বিশ্ব-দরবারে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাব্য, ছোটগল্প,
উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, নাটক, প্রবন্ধ, গান- সাহিত্যের প্রত্যেক বিভাগেই
তাঁর অবদান রয়েছে। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার,
চিত্রকর, নাট্যকার, নাট্যপ্রযোজক এবং অভিনেতা ছিলেন। তাঁর অজস্র রচনার
মধ্যে সোনার তরী, চিত্রা, বলাকা, ক্ষণিকা, ঘরে বাইরে, গোরা, শেষের কবিতা,
বিসর্জন, রক্তকরবী ও গল্পগুচ্ছ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কলকাতা, ঢাকা, অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানসূচক
ডি.লিট. ডিগ্রি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট (২২শে
শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতায় পরলোকগমন করেন।]
কবি-পরিচিতি: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডি. এল. রায় নামে সমধিক পরিচিত। ঐতিহাসিক নাটক ও হাসির গান রচনায় তিনি খ্যাতি
অর্জন করেন। ঐতিহাসিক নাটকগুলোতে একদিকে তাঁর স্বদেশপ্রেম ও অন্যদিকে পরাধীনতা থেকে সৃষ্ট সমবেদনা প্রকাশ
পেয়েছে। হাসির গানে তিনি কাপুরুষতা ও সংকীর্ণতাকে আঘাত
করেছেন। কবিতায় ছন্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রেও তিনি কুশলতা দেখিয়েছেন। তারাবাঈ,
প্রতাপসিংহ, নূরজাহান, মেবার পতন, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত ইত্যাদি তাঁর প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক নাটক। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ
হচ্ছে: আষাঢ়ে, হাসির গান, মন্দ্র, আলেখ্য ও ত্রিবেণী। ১৯১৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[কবি-পরিচিতি: কামিনী রায় ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে বরিশাল জেলার বাসন্ডা
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উনিশ শতকের শেষদিকে যে কজন বিশিষ্ট মহিলা
কবির সাক্ষাৎ মেলে, তাঁদের মধ্যে কামিনী রায় অন্যতম। ১৮৮৬
খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে
সম্মানসহ বিএ পাস করেন। তাঁর কবিতায় মানুষের জীবনের আশা-নিরাশা,
সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনার সহজ সাবলীল অভিব্যক্তি ঘটেছে। স্বামীর অকাল
বিয়োগে এই উচ্চশিক্ষিতা মহিলার ব্যক্তিগত জীবন দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে
ওঠে। সেই দুঃখ-বেদনার প্রতিফলন তাঁর কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।
কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, শোক সংগীত,
দীপ ও ধূপ, জীবন পথে ইত্যাদি। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কবি কামিনী রায়
মৃত্যুবরণ করেন।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
[কবি-পরিচিতি: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার
কাছাকাছি নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য এই
কবি তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল ছিলেন। তাঁর মেজাজে ও
কাব্য-নির্মাণ-কৌশলে তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রভাবমুক্ত ছিলেন। বাংলা
কবিতায় নতুন ছন্দের প্রবর্তনে তিনি গুণগ্রাহীদের কাছে 'ছন্দের
জাদুকর' বলে অভিহিত হয়েছেন। ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে
সঙ্গে বাংলা কবিতায় প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দের যথাযথ প্রয়োগে তিনি
ছিলেন সুদক্ষ। তাছাড়া একজন সার্থক অনুবাদক রূপেও তিনি সমাদৃত
হয়েছেন। তীর্থ সলিল ও তীর্থরেণু গ্রন্থদুটি তাঁর অনূদিত কবিতার
সংকলন। সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেণু ও বীণা, হোমশিখা, ফুলের ফসল, কুহু ও
কেকা, তুলির লিখন, মনিমঞ্জুষা, অভ্র আবির, বিদায় আরতি ইত্যাদি তাঁর
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে
কবির অকালমৃত্যু ঘটে।]
[কবি-পরিচিতি: নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালে নেত্রকোণা জেলার কাশবন
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকের সূচনা থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত তিনি কবিতায় ও গদ্যে স্বচ্ছন্দে সৃজনশীল
হলেও কবি হিসেবেই তিনি খ্যাত। তাঁর কবিতায় প্রতিবাদী চেতনা, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের ছবি যেমন
প্রখর, কবিতা-নির্মাণে শিল্প-সৌন্দর্যের প্রতিও তিনি সজাগ।
নির্মলেন্দু গুণ পেশায় সাংবাদিক। কাব্য সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি
১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি
বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য
কাব্যগ্রন্থ-প্রেমাংশুর রক্ত চাই, বাঙলার মাটি বাংলার জল,
চাষাভুষার কাব্য, পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ; ছোটগল্প- আপন দলের মানুষ।
ছোটদের জন্য লেখা উপন্যাস-কালোমেঘের ভেলা, বাবা যখন ছোট
ছিলেন।]
=০=
আরও পড়ুন:
0 Comments