Hot Post

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

 হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

(প্রাক্তনঃ রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা)

haji muhammad mohsin govt. high school rajshahi

যে দানবীর বাংলার দরিদ্র মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার ও তাদের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বিপুল সম্পত্তি মুক্তহস্তে দান করেছেন, তিনি হলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন (১৭৩২-১৮১২)। সততা, সাধুতা, ধর্মপরায়ণতা,কর্তব্যপরায়ণতা, পরোপকারিতা ইত্যাদি ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের জন্য তিনি দান করেছেন তাঁর ঐশ্বর্য। দানশীলতার জন্য তিনি 'দানবীর' ও 'বাংলার হাতেমতাই' নামে সুপরিচিত।
১৭৩২ সালে হুগলি জেলার এক সম্ভ্রান্ত ঐশ্বর্যশালী পরিবারে হাজী মুহম্মদ মুহসীন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ধর্ম ও জ্ঞান অন্বেষণের জন্য হাজী মুহম্মদ মুহসীন ত্রিশ বছর ধরে ইরান, মিসর ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। দেশে ফেরার পথে তিনি পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালন করেন। পিতৃসম্পত্তি ও পরলোকগত বোন মুন্নুজানের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়ে মুহসীন প্রচুর ঐশ্বর্যের মালিক হন। বিপুল সম্পদের মালিক হয়েও তিনি অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। সমাজের জনহিতকর কাজে তিনি সমস্ত সম্পত্তি ব্যয় করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রসিদ্ধ ইমামবাড়া তাঁর জনহিতকর কার্যাবলির অন্যতম নিদর্শন।

বাংলার দরিদ্র মুসলমানদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য মুহসীনের দান অতুলনীয় ও চিরস্মরণীয়। গরিব মেধাবী মুসলমান ছাত্ররা যাতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে সে জন্য তিনি কলকাতায় ১৮০৬ সালে তাঁর তৎকালীন এক লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তি দিয়ে মুহসীন ট্রাস্ট' গঠন করেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে মুহম্মদ মুহসীন ট্রাস্ট' গঠন করেছিলেন তা কার্যকর হয়নি। সকল সম্প্রদায়ের ছাত্ররা শিক্ষার জন্য এই অর্থ লাভ করত। অধঃপতিত দরিদ্র মুসলমান সমাজে শিক্ষা বিস্তারের যে উদ্দেশ্যে মুহসীন তাঁর সম্পত্তি দান করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। 

অবশেষে ১৮৭৩ সালে নওয়াব আব্দুল লতিফ, স্যার উইলিয়াম হান্টার প্রমুখ ব্যক্তিদের আন্তরিক চেষ্টায় মুহসীন ট্রাস্টের' অর্থ শুধু বাংলার মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে এবং গরিব ও মেধাবী মুসলমান ছাত্রদেরকে বৃত্তি প্রদানে ব্যয় করার ব্যবস্থা করা হয় । ফলে শত শত দরিদ্র মেধাবী মুসলমান ছাত্র এ ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি লাভ করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অধ্যয়ন করার সুযোগ পায় ।

মুসলমানদের শিক্ষার জন্য হাজী মুহম্মদ মুহসীন হুগলি কলেজ ও হুগলি মাদরাসা স্থাপন করেন। এসব প্রতিষ্ঠান মুহসীনের সম্পত্তির আয় দিয়ে পরিচালিত হত। এছাড়া মুহসীন সকল ধর্মের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সাহায্য করেন। হাজী মুহম্মদ মুহসীন অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। এই দানশীল এবং পরোপকারী ব্যক্তি ১৮১২ সালে ইন্তেকাল করেন।

ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার ফলে ভারতীয় মুসলমানরা তাদের ঐতিহ্য ও গৌরব হারাতে শুরু করে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলমানদের জায়গায় হিন্দু জমিদারগণ ভূমির মালিকে পরিণত হন। ফারসির বদলে অফিসে-আদালতে ইংরেজি প্রবর্তন হওয়ার ফলে ইংরেজি ভাষা-বিরোধী মুসলমানরা সরকারি চাকরি হতে বঞ্চিত হন।

নওয়াব আবদুল লতিফ (১৮২৮-১৮৯৩) অধঃপতিত বাংলার মুসলমানদের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য-শিক্ষার প্রসারে এবং সমাজ-সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর চেষ্টায় কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজি ও ফারসি বিভাগ খোলা হয় এবং মাদরাসাকে এক উন্নত ও আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে মাদরাসা স্থাপিত হয়। এগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক শিক্ষাও প্রবর্তন করা হয়। তিনি মুসলমানদেরকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় কলকাতার হিন্দু কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে রূপান্তরিত হয় এবং
হিন্দু-মুসলিম সকলে সেখানে প্রবেশাধিকার পায় । ‘মুহসীন ট্রাস্টের টাকায় সকল সম্প্রদায়ের ছাত্রগণ উপকৃত হলেও মুসলমান ছাত্ররা বিশেষ উপকৃত হয়নি। মুহসীন ট্রাস্টের সমুদয় অর্থ শুধু মুসলমান ছাত্রদের জন্য ব্যয় করার প্রস্তাব তিনি সরকারের কাছে পেশ করেন এবং এ ফান্ড পুনর্গঠনের ব্যবস্থা করেন। নওয়াব আব্দুল লতিফের চেষ্টায় মুহসীন ট্রাস্টের অর্থ শুধু বাংলার মুসলমানদের শিক্ষা বিস্তারে, বিশেষ করে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদানে ব্যয় করার ব্যবস্থা হয়। গরিব ও মেধাবী মুসলমান ছাত্রদেরকে পুরস্কার ও বৃত্তি প্রদানের জন্য নওয়াব আবদুল লতিফ ধনী মুসলমানদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য সরকার তাঁকে 'এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা' স্বর্ণপদকে পুরস্কৃত করেন।

নওয়াব আবদুল লতিফ এর প্রচেষ্টায় ১৮৭৪ খ্রিঃ রাজশাহীর প্রাণ কেন্দ্রে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫০ বছর পুরাতন প্রতিষ্ঠানটি ২২ একর জমির উপর  স্থাপিত।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

ছবিঃ হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

এর সুবিশাল মাঠ অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসের স্বাক্ষী। কিন্তু মাদ্রসা নামের কারণে এখান থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায় নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী

তাই সচেতন মহল থেকে দাবি ওঠে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করার। ফলে রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন, রাজশাহীর মাধ্যমে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী নাম পরির্বতন
পরে অনেক চড়াই উৎড়াই পার করে গত ০২/০৯/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি  হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী নাম লাভ করে। রাজশাহীর অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে শিক্ষা বিস্তার করে যাচ্ছে। এখান থেকে পাশ করে শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে নাম করা প্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। চাকরি করছে সুনামের সাথে দেশে ও বিদেশে।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী এর ওয়েবসাইট http://www.hmmghsraj.edu.bd

Post a Comment

0 Comments